বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:ফের তারকা পতন পশ্চিমবাংলায়। এবার মৃত্যু হল বাচিক শিল্পী ও আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষের। বয়স হয়েছিল ৭৮। কোভিডে সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর শরীরে কোনও উপসর্গ ছিল না। কলকাতার যোধপুর পার্কের বাড়িতেই শুক্রবার সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ প্রয়াত হন তিনি। শোকের ছায়া বাংলার সংস্কৃতি জগতে। শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘বিশিষ্ট আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষের প্রয়াণে আমি গভীর শোকাহত। তাঁর পরিবার, পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’ শোক প্রকাশ করেছেন আবৃত্তি ও নাটক জগতের জগন্নাথ বসু, দেবাশিস বসু, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংস্কৃতি জগতের আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার থেকে তাঁর জ্বর ছিল। শুক্রবার সকালে মৃত্যুর পর তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পেশাগত জীবনে প্রদীপ ঘোষ ছিলেন সরকারি আইনজীবী। পশ্চিমবাংলা সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগে যুগ্ম তথ্য অধিকর্তা হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। পাশাপাশি সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। আমৃত্যু তাঁর এই সম্পর্ক বজায় ছিল। বাংলা বাচিক শিল্প এবং আবৃত্তি ক্ষেত্রে তিনি প্রবাদপ্রতিম হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর কণ্ঠ, বলার রীতি, স্পষ্ট উচ্চারণ দশকের পর দশক ধরে বাঙালিকে মুগ্ধ করে রেখেছে। তাঁর প্রয়াণে বাচিক শিল্পে একটা ধারার পরিসমাপ্তি হল। ২০১৭ সালে পশ্চিমবাংলা সরকার তাঁকে কাজী সব্যসাচী পুরস্কার দেয়।
আবৃত্তিকার ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কাজী সব্যসাচী যখন মধ্যগগনে, তখনই তরুণ তুর্কি হিসেবে প্রদীপ ঘোষ আবৃত্তিজগতে আসেন। প্রথম তাঁর আবৃত্তি শুনি উত্তর কলকাতার বয়েজ ওন হলে। আমার বাবা নিয়ে গিয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। তাঁর কণ্ঠস্বর, উচ্চারণ আর ব্যক্তিত্ব আমায় মুগ্ধ করেছিল।’ উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলামের পুত্র কাজী সব্যসাচীর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে প্রদীপ ঘোষ একসঙ্গে বহু কবিতা পাঠ করেছেন। এ ছাড়া তাঁর কণ্ঠে কবি বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘জোনাকি’ এবং নজরুল ইসলামের ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতা আবৃত্তি বাঙালিকে আজও মোহমুগ্ধ ও স্মৃতিমেদুর করে রেখেছে।
বাচিক শিল্পী দেবাশিস বসু বলেছেন, ‘একজন সরকারি কর্মী যে এতটা সংস্কৃতিমনস্ক হতে পারেন, তা প্রদীপ ঘোষকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। কেউই পারতেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ এবং কাজী সব্যসাচীর পর তাঁর গলায় ‘কামাল পাশা’ ওই সময় জনপ্রিয়তার চূড়া স্পর্শ করেছিল। স্ত্রীর মৃত্যুর পর মানসিক দিক থেকে বড় একা হয়ে পড়েছিলেন।’ রেডিওর নাটক শিল্পী জগন্নাথ বসু বলেছেন, ‘তাঁর মৃত্যু অনেক ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কোনও অনুষ্ঠানে সব্যসাচী কোনও কবিতার মুখরা আবৃত্তি করে বলতেন, ‘বাকিটা শোনাবেন প্রদীপ।’ তার পর সভাগৃহ জমে যেত প্রদীপ ঘোষের গলায়।’